স্ক্রিনশট, একটি আতঙ্কের নাম
স্ক্রিনশট। আমরা সবাই এই শব্দের সাথে কমবেশি পরিচিত। প্রত্যেক জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ, এই দুইটা দিক থাকে। কিন্তু মানুষ সাধারণত ভালো দিকটা থেকে খারাপ দিকটাই বেশি গ্রহন করে। স্ক্রিনশট ও ঠিক এমনই।
বর্তমানে স্ক্রিনশট একটি ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করার নতুন একটি মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে এই স্ক্রিনশট। এই আতঙ্ক থেকে ছেলে-মেয়ে,যুবক-যুবতী,ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ,চাকুরীজীবী,শিল্পী,খেলোয়াড়,সাধারন মানুষ কেউ বাদ নয়।
সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত থাকে মেয়েরা। বর্তমানে প্রেম মানেই লুতুপুতু ম্যাসেজ আর সাথে নিজেদের খারাপ ছবি আদানপ্রদান। বর্তমানে প্রেম করতেও যেমন দেরি লাগে না তেমনি ভাঙ্গতেও দেরি হয় না।আর যখনই প্রেমটা কোন কারনে ভেঙ্গে যায় বা মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তখনই এসব ছবি আর ম্যাসেজের স্ক্রিনশটের আতঙ্কে মেয়েটি ভুগতে থাকে,আর সেই সুযোগটাও হাতছাড়া করতে নারাজ অনেক প্রেমিক। ফলে অনেক মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যায়,অনেকের বিয়ের পরে ডিভোর্স হয়ে যায়,অনেকের সুখের জীবনে অশান্তি নেমে আসে। অনেকে এগুলো থেকে বাঁচতে প্রেমিকের কথায় সব করতে রাজি হয়ে নিজের সর্বনাশ করে, অনেকে হাজার হাজার টাকা দিয়ে এর থেকে মুক্তি পেতে চায়, অনেক মেয়েকে ইনবক্সেও ইভটিজিং এর স্বীকার হতে হয়, অনেকে গ্যাং রেপ এর শিকার হয়, অনেকে লজ্জায় অপমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে একটা প্রতারক চক্রই তৈরী হয়েছে এভাবে ছেলে মেয়েদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য।ফেসবুক এখন ভরে গেছে ফেক আইডিতে।কোনটা ছেলে কোনটা মেয়ে বোঝার উপায় নাই।আর এই প্রতারক চক্রগুলো বিভিন্ন নামে ফেক আইডি খুলে সহজ সরল ছেলে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে কিছু খারাপ ম্যাসেজ আর খারাপ ছবি সংগ্রহ করেই শুরু করছে ব্ল্যাকমেইল করা।হয় হাজার হাজার টাকা চায় নয়তো ছেলে মেয়ে গুলোকে নানা খারাপ কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে।আর এসব ছেলে মেয়েরা তাদের খারাপ ম্যাসেজের স্ক্রিনশটের আতঙ্কে যেকোন কিছু করতে রাজি হয়ে যায় শুধু সমাজের কাছে নিজেকে, নিজের চরিত্রকে লুকিয়ে রাখার জন্য।সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে।এই ফাঁদ থেকে অনেকেই হাজার চেষ্টা করেও বের হতে পারে না বরং ভয়ে আতঙ্কে আরো বেশি করে ফাঁদে জড়িয়ে যায়। হয়তো কেউ ফেসবুকে কোন স্ট্যাটাস অথবা কোন ছবি দিলেন,সবার ভালো লাগা যেহেতু এক নয় তাই হয়তো কারো ভালো লাগতে পারে বা কারো খারাপ লাগতে পারে।ভালো না লাগলে অনেকে সেই স্ট্যাটাস বা ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে ট্রল বানিয়ে পাবলিক প্লেস এ সেই ব্যক্তিকে ইনসাল্ট করবে, হাসির পাত্র বানিয়ে সকলের সামনে লজ্জায় ফেলবে।এমন কি বিতর্কিত কিছু হলে নানা রকম হুমকির সম্মুখীনও হতে হচ্ছে। এই স্ক্রিনশটের দ্বারা ভদ্রবেশি মুখোশ পড়া অনেক ভাইয়ার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেটও প্রকাশ হয়ে যায়। আর এই স্ক্রিনশট কে সবাই শতভাগ সত্যি বলেই গন্য করেন ফলে আদালতেও এটা প্রমান হিসেবে পেস করতে দেখা যায়। বর্তমানে সবশ্রেনীর মানুষের গোপন ও ব্যক্তিগত আলাপ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে,হোয়াটসএপ,ইমো,ভাইবার,মেসেঞ্জার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ।আর এগুলো থেকেই দুষ্ট চক্র বা আলাপচারী ব্যক্তি নিজের স্বার্থসিদ্ধি বা ওপর ব্যক্তিকে বিপদে ফেলতে বা হেয় প্রতিপন্ন করতে একসময় এসব তথ্যের স্ক্রিনশট বাহিরে প্রকাশ করে বা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে সেই ব্যক্তিকে ব্লাকমেইল করে।এটার ভুক্তভুগি বর্তমানে সবশ্রেনীর মানুষের ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত।ক্রিকেটার,নায়ক নায়িকা,এমপি মন্ত্রী,সুশীল সমাজ,কেউ এই উদাহরনের বাহিরে নেই আজ।
এই স্ক্রিনশটের ভয়ে একজন যেন অন্য জনের কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।তাই সবাইকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে একটু সচেতন হওয়া উচিত।নিজেকে কারো কাছে জিম্মি হতে হয় এমন কোন তথ্য আদানপ্রদান থেকে বিরত থাকুন।অপরের সাথে যেকোন সম্পর্কে জড়ানোর আগে সাবধান হোন।স্ক্রিনশট আতঙ্ক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন,নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করুন।
লেখাটা ভালো ছিলো...
ReplyDelete